আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়ার আদমদীঘিতে হিন্দুধর্ম গোপন করে শ্রী রাম চন্দ্র (৫৫) নামের এক গ্রাম পুলিশ নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে ২৯ বছর বয়সী এক মুসলিম তরুনীকে বিয়ে করে প্রায় সাত বছর সংসার করার পর তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর রামের কাছ থেকে ওই নারীর ভাই ধারের ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে নানা রকম তালবাহানা এবং টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন ওই নারী ও তার পরিবার। এনিয়ে গত ৩ জুন ওই নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর উপজেলার সান্তাহার ইউপির সান্দিড়া গ্রামের ঋষিপাড়ার গ্রাম পুলিশ শ্রী রাম চন্দ্র নিজেকে বাবু পরিচয় দিয়ে একই ইউনিয়নের বামনীগ্রামের মৃত ছামাদুল সাখিদারের মেয়েকে নওগাঁ নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তিনি ওই তরুনীর বাড়ীতেই থাকা শুরু করেন এবং ইসলাম ধর্ম মোতাবেক সকল সামাজিক রীতি নীতি পালন করেন। এমনকি তিনি মসজিদ গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতেন। কিন্তু ২০২০ সালের জুন মাসের দিকে ওই তরুনী তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন। তিনি হিন্দু স¤প্রদায়ের এবং তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এরপর সনাতনধর্মালম্বী মানুষের সাথে সংসার করতে না চাইলে ২০২০সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি এফিডেভিটের মাধ্যমে মুসলমান হয়ে আবারো বিবাহ রেজিস্ট্রি করেন। সেই সাথে তিনি আগের পরিবারের সাথে আর কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবেনা বলে প্রতিশ্রতি দেন। এরপর ২০২১ সালে তার প্রথম পক্ষের ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ওই তরুনীর কাছে টাকা চাইলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল তিনি (রাম) কোর্টে এফিডেভিটের মাধ্যমে তাকে তালাক দেন। ফলে নিরুপায় হয়ে ওই তরুনী তার ভাইয়ের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ধার নিয়ে ২০২২ সালের ৩ মার্চ আবারো তিন লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিবাহ রেজিস্ট্রি করেন। এরপর তিনি নানা রকম জটিলরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা বাবদ ওই তরুনী তার ভাইয়ের কাছে থেকে ফের দুই লাখ বিশ হাজার টাকা তাকে ধার নিয়ে দেন। গত এপ্রিল মাসে ওই তরুনীর ভাই বিদেশ থেকে দেশে আসার পর ধারের পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তালবাহানা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। সেই সাথে ওই তরুনীকে আবারো তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়ে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দাবী করে প্রথম স্ত্রী ও তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। বিষয়টির সমাধান চেয়ে গত ৩ জুন ওই তরুনী তার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানতে চাইলে সান্তাহার ইউপির গ্রাম পুলিশ শ্রী রাম চন্দ্র জানান, ‘২০২০ সালে এফিডেভিটের মাধ্যমে মুসলমান হয়ে ওই মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম। তার আচার ব্যবহার ও চলাফেরা খারাপের কারনে বনিবনা না হওয়ায় তাকে তালাক দিয়ে আবারো সনাতন ধর্মে ফিরে আসি। তিন লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিয়ে রেজিস্ট্রির ঘটনা ভূয়া। ওই বিয়ের কোনো সাক্ষি নেই। ওই মেয়ের অভিযোগের পর আমরাও থানায় অভিযোগ করেছি। বিষয়টি সমাধানে বসতে রাজী আছি। ঘটনাটির তদন্ত কর্মকর্তা আদমদীঘি থানা উপ পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার জানান, দুই পক্ষের অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামা হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটির বেশ কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে মসজিদের ঈমাম বলেছেন শ্রী রাম চন্দ্র মুসলিম হয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতেন। উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হবে। চূড়ান্ত তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জাহাঙ্গীর আলম বাবু , কার্যালয়: পশ্চিম শেওড়াপাড়া ইকবাল সরণি মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭১১৩১১০৭৪-০১৫৫৬৮১৮৬৮০, (নিউজ বিজ্ঞাপন) ইসরাত জাহান ০১৭১৩৭২২৮২৪