শাহীন সুলতানা, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ)
চলছে বর্ষার মৌসুম। ভারী বর্ষণ। নদ-নদীতে থই থই পানি। গ্রামাঞ্চলের বর্ষার বাহন কোশা নৌকা তৈরি আর বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ হাট-বাজার। ষড়ঋতুর অন্যতম বর্ষাকালে হাওর বা নিম্নাঞ্চলের মানুষের চলাচলের যোগ্য বাহন এই কোশা নৌকা।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা ও বর্ষাকাল শুরু হয়ে যাওয়ায় কুলিয়ারচরের বিভিন্ন এলাকায় এই কোশা নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগর, ব্যবসায়ী আর ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে নৌকা তৈরির এলাকাগুলো। তৈরিকৃত এসব কোশা স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ভৈরব, বাজিতপুর, কটিয়াদী, রায়পুরা, বেলাব, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা যায়, কুলিয়ারচর বাজারের কিছু অংশ বাদ দিলে পুরো এলাকাটিই মূলত গ্রামাঞ্চল। হাওর ও ভাটি এলাকার প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র-কালী নদীসহ অসংখ্য খাল-বিল নালায় বিধৌত কুলিয়ারচরের পল্লির বাসিন্দাদের বর্ষায় অতি প্রয়োজনীয় বাহন বিভিন্ন কোশা বা ডিঙি নৌকা।
বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষজনের অন্য কোনো কাজ না থাকায় নদী-নালাসহ প্লাবন ভূমি থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মাছ শিকারেও এসব নৌকার প্রয়োজন হয়। ফলে এ সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। সেই অতিপ্রয়োজনীয় বাহনটির চাহিদা মেটানোর কাজে নিয়োজিতদের এখন যেন এতটুকু ফুরসত নেই। দিন-রাত চলছে সেই বাহন তৈরির কাজ।
উপজেলার ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ড এলাকার নৌকা ও ডিঙি তৈরির কারিগর সন্তোষ সূত্রধর (৫৬), ভজন চন্দ্র সূত্রধর (৪৬), গৌরাঙ্গ চন্দ্রসূত্র ধর (৪৯), মেন্টু চন্দ্র সূত্রধর (৫৪) ও কার্তিক চন্দ্র সীল (৪৬) জানান, সারা বছর তারা এক প্রকার বেকারই থাকেন। কিন্তু চৈত্র থেকে শ্রাবণ-এই পাঁচ মাস তারা নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে তারা মজুরি পান আকার ভেদে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। প্রতিদিন এক থেকে দেড়টা নৌকা তারা তৈরি করতে পারেন। মৌসুমে সাধারণত ৫০-৬০টি নৌকা তৈরি করে থাকেন। তবে যে বছর পানি বেশি ওঠে এবং বেশি দিন স্থায়ী হয় সে বছর এক থেকে দেড়শ নৌকা তৈরি করে থাকেন।
নৌকা ও ডিঙি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে নৌকাগুলো তৈরি করে থাকেন। গুণগতমান ভালো এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের কাছে এখানকার নৌকার খুব কদর রয়েছ।