1. hello@bijoytv.live : বিজয় টিভি : বিজয় টিভি
  2. info@www.bijoytv.live : বিজয় টিভি :
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

নেসকোতে বিএনপি ব্যানারে ফের ক্ষমতার চর্চা সাবেক আওয়ামীপন্থীদের!

আব্দুর রাজ্জাক রাজশাহী ।
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

আব্দুর রাজ্জাক রাজশাহী ।
রাজশাহী নেসকোতে (নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) এক সময়ের আওয়ামী ঘরানার শ্রমিক লীগ নেতারা এখন পুনর্বাসিত হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী দলীয় পরিচয়ে। অভিযোগ রয়েছে—এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পেছনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে কাজ করছেন মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আরিফ আলী পাখি ও সহ-সভাপতি আব্দুল বারেক শেখসহ কিছু সুবিধাভোগী নেতা, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছেন।

আজ তারা রাজনৈতিক আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে এক সময়ের আওয়ামী ঘরানার বিতর্কিত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে নেসকোতে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত। ফলে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি আজ প্রশ্নবিদ্ধ এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে দুর্নীতি নতুনভাবে ডালপালা মেলছে।

রাজশাহীতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন এক সময়ের আলোচিত আওয়ামী ঘরানার শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম। তবে বিস্ময়করভাবে বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ অলঙ্কৃত করছেন। রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে ফের সুবিধাভোগী হয়ে ওঠা এই নেতার বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে নেসকো বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রভাষ কুমার আচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সোহেলের স্বাক্ষরে রাজশাহীর ১৩ সদস্যবিশিষ্ট শ্রমিক লীগ কমিটি অনুমোদিত হয়। সেখানে সিরাজুল ইসলাম ছিলেন সহ-সভাপতি পদে। কিন্তু ‘জুলাই বিপ্লব’–পরবর্তী রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তনের সুযোগে তিনি বিএনপি ঘরানার শ্রমিক সংগঠনে স্থান করে নেন।

সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে নেসকো বিভাগের একজন স্টোর কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তার সরকারি নিয়োগ ফোরম্যান পদে, যার কাজ মূলত লাইনে সরাসরি বিদ্যুৎ সঞ্চালন মেরামত ও মনিটরিং। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব না পালন করেও স্টোর কিপারের দপ্তরে বসে নিয়মিত অফিস না করে মাসে প্রায় ৩২ ঘণ্টার ‘ওভারটাইম বিল’ উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি মিটার সিলিং ও মিটার পরিবর্তনের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করছেন—যা ফিডার ইনচার্জ বা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বাধীন কাজ।

নেসকোর একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,এক সময় আওয়ামী সরকারের ছায়ায় থেকে ক্ষমতা ভোগ করেছেন সিরাজুল। এখন জাতীয়তাবাদী ট্যাগ লাগিয়ে আবার পুরনো অনিয়মের চর্চা করছেন। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্য হুমকি।”

অনেকের প্রশ্ন, যাঁরা ‘জুলাই ৩৬’-এর আন্দোলনে অংশ নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের আত্মত্যাগকে উপেক্ষা করে কীভাবে বিএনপির নেতৃত্বে আজ এমন সাবেক আওয়ামীপন্থী নেতাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে? রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও আদর্শহীনতার এই চিত্রে হতাশ সাধারণ কর্মীরাও।

রাজনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের দ্বিচারিতা শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি মাসে একজন কর্মচারীর এভাবে অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ওভারটাইম উত্তোলন সরকারের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির কারণ হচ্ছে—যা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আরিফ আলী পাখি বলেন, “নেসকোর যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তারা একসময় আমাদের শ্রমিক দলের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। পরে বদলির আশঙ্কায় তারা বাধ্য হয়ে শ্রমিক লীগে যোগ দেন। তবে এখন পট পরিবর্তনের সম্ভাবনা সামনে রেখে আবার তারা শ্রমিক দলে ফিরে আসছেন।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের গঠিত কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত। সে কারণে আমরা তাদের পাশে আছি। যদি কারো কাছে তাদের কমিটির ছবি বা কাগজপত্র থাকে, তাহলে তা আমাদের কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য বলব, যাতে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।”

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল বারেক শেখের মোবাইল ফোনে তাকে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। পরে তিনি সংক্ষেপে বলেন, “আপনার যা ইচ্ছা, তাই লিখেন।” তার এই মন্তব্যে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

অথচ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি রাজশাহী গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেলে ঢাকা থেকে আগত নেসকোর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউসুফের সঙ্গে নেসকো শ্রমিক লীগের নেতা সেরাজুল ও শরিফুল ইসলামের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে নেসকো শ্রমিক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে, নেসকো রাজশাহী বিভাগ-৩–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন,
সিরাজুল ইসলামের চাকরিসংক্রান্ত বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে অনুগ্রহ করে অফিসে এসে সরাসরি কথা বলুন।”

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. এরশাদ আলী ইশা বলেন, “নেসকোর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কারো সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় নেই। যদি প্রমাণ থাকে যে তারা পূর্বে শ্রমিক লীগের কমিটিতে ছিলেন কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন—তাহলে সেই ছবি বা কমিটির কাগজপত্রসহ উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ আমাকে দিন। আমি সেগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত,  বিজয় টিভি .লাইভ আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট