1. hello@bijoytv.live : বিজয় টিভি : বিজয় টিভি
  2. info@www.bijoytv.live : বিজয় টিভি :
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ১২:১৪ অপরাহ্ন

তামাক ক্রাসিং মিল রাস্তা ও বাজারের পাশে: পথচারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যে নীরব হুমকি!

শিল্পী আক্তার রংপুর ব্যুরো
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

শিল্পী আক্তার রংপুর ব্যুরো
বাংলাদেশ একটি তামাক উৎপাদনকারী দেশ। কিন্তু তামাক প্রক্রিয়া করণ শিল্প যখন রাস্তা, জনবসতি, স্কুল, হাট-বাজার বা কৃষিজমির পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠে—তখন তা হয়ে ওঠে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। রংপুর শহরের উপকণ্ঠে, সদর ও গংগাচড়া থানার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাঁজরে বিঁধে থাকা কাঁটার মত গড়ে উঠেছে তামাক ক্রাসিং মিল—যা মেইন রাস্তা,বাজার ও একটি বিদ্যালয় থেকে মাত্র কয়েক গজ দূর।
এখন প্রশ্ন হলো: এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান জনবহুল এলাকায় কীভাবে অনুমোদন পায়? তামাক ক্রসিং- গুড়া ও ধূলিকণায় পথচারী এবং শিশুরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে? এই ধরনের স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের ভূমিকা কোথায়?
তামাক ক্রাসিং মিল সাধারণত শুকনো তামাক সংগ্রহ করে তা কেটে, চূর্ণ করে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় তামাকের ধূলিকণা বাতাসে ছড়ায়। বিষাক্ত ভাসমান কণা (যা ফুসফুসে গিয়ে জমে)। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের শ্বাসতন্ত্র পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত না হওয়ায় এদের মধ্যে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া ছোট শিশুদের ওপর এই ধূলিকণা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শিক্ষকরা বলেছেন, অনেক ছাত্র ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না, কারণ তারা মাথাব্যথা ও বুকে চাপ অনুভব করে। একজন অভিভাবক বললেন,“আমার ছেলের গলা সবসময় খুসখুস করে, আগে এমন ছিল না।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, অনুযায়ী—
জনবসতিপূর্ণ বা সংবেদনশীল এলাকায় (যেমন স্কুল, হাসপাতাল) পরিবেশ দূষণকারী শিল্প স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমন মিল চালাতে হলে অবশ্যই পরিবেশ ছাড়পত্র (Environmental Clearance) নিতে হয়, যার মধ্যে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা গেছে, মিলগুলোর অধিকাংশ চলছে ছাড়পত্র ছাড়া। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন শিশু চিকিৎসক বললেন,“তামাকের কণা চোখ ও ফুসফুসে মারাত্মক প্রদাহ তৈরি করে। বিশেষ করে ৫-১২ বছরের শিশুদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মিল মালিক একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সমর্থন ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মিল চালু করায়, সাধারণ মানুষ কিছু বলতে সাহস পায় না। ফলে তামাক চক্র যেমন লাভবান, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসহায় শিশু, পথচারী ও কৃষিজমি।
বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ কর্মীরা সমাধানে কিছু সুপারিশ দিয়ে বলেছেন-ক) স্কুল, রাস্তা ও জনবসতির ১ কিলোমিটারের মধ্যে তামাক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, খ) প্রতিটি তামাক মিলের জন্য বাধ্যতামূলক পরিবেশ ছাড়পত্র ও বছরে একাধিকবার পরিদর্শন করা, গ) তামাকচাষ নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প কৃষি সহায়তার ব্যবস্থা করা,
ঘ) শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি জরুরি মনোযোগ দিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা,
তামাক শুধু ধূমপানের মাধ্যম নয়, উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে। স্কুল ও রাস্তার পাশে তামাক ক্রাসিং মিল থাকা শুধু একটি ত্রুটি নয়, বরং একটি কাঠামোগত অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে আজই জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত,  বিজয় টিভি .লাইভ আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট