মোঃ ইব্রাহিম খলিল, (ময়মনসিংহ):
প্রযুক্তি যখন আশীর্বাদ হয়ে মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করে তুলছে, তখন তার অন্ধকার দিকগুলোও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) প্রযুক্তির অপব্যবহার এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বিস্ময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিন দিন যেমন মানুষের জীবন সহজ করছে, তেমনি এর অপব্যবহারে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। বিশ্বের নানা প্রান্তে এখন এআই ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া তথ্য, তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল প্রতারণা, এমনকি যুদ্ধ-সংঘর্ষেও ব্যবহৃত হচ্ছে স্মার্ট ড্রোন ও অটোনোমাস অস্ত্র।
সচেতন মহল বলছেন, সচেতনতা ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে এআই এখন এমন এক কালো জগতে প্রবেশ করছে, যেখানে অপরাধ, প্রতারণা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।
🔍 কালো জগতে এআই: আতঙ্কের এক নতুন মাত্রা
আজকের দিনে এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ডিপফেইক ভিডিও, যা দিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর ও মুখাবয়ব নকল করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া বার্তা। এআই-চালিত ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ব্যাংক একাউন্ট, ওটিপি বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতেও এখন এআইকে ব্যবহার করছে সাইবার অপরাধীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি, মিথ্যা প্রচার, এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, “যদি এই প্রযুক্তি সচেতনতা ও নীতিমালাহীনভাবে চলতে থাকে, তবে এটি এক সময় গণবিধ্বংসী অস্ত্রে পরিণত হতে পারে।”
⚠️ আইনের বাইরে বেআইনি প্রক্রিয়া বাড়াচ্ছে উদ্বেগ
এআই নির্ভর প্রতারণা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রযুক্তি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ মানুষজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রযুক্তির জটিলতা ও অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে আইনের বাইরে বেআইনি উপায়ে চলা কার্যক্রম দিন দিন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে।
এ কারণে এখনই যদি সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন না করে, তবে আগামীতে এই প্রযুক্তি হয়ে উঠবে বিশৃঙ্খলার ভয়াবহ উৎস।
🛡️ নিয়ন্ত্রণ জরুরি: প্রযুক্তি হোক মানুষের উপকারে
প্রযুক্তি বিশারদদের মতে, এখনই সময় সরকারি পর্যায়ে এআই ব্যবহারে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করার।
সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব।
🌟শুধুই যে অন্ধকার সেটিও নয় তবুও আছে আশার আলো
অবশ্য সবই অন্ধকার নয়। দায়িত্বশীল ব্যবহারে এআই হয়ে উঠতে পারে মানবসভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সহযাত্রী।
🔹 চিকিৎসাক্ষেত্রে ক্যানসার বা জটিল রোগ নির্ণয়ে এআই প্রযুক্তি দিচ্ছে নতুন আশার আলো।
🔹 কৃষিতে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, রোগ শনাক্ত, ও ফলন বৃদ্ধিতে এআই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
🔹 বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে এআই-চালিত অ্যাপ ও যন্ত্রপাতি।
🔹 শিক্ষাখাতে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কাস্টমাইজড লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স।
এআই একদিকে যেমন সভ্যতাকে এগিয়ে নিচ্ছে, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হয়ে উঠছে বড় হুমকি। এখনই যদি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে সামনে অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ পরিণতি।
তাই সময় এসেছে – প্রযুক্তিকে শৃঙ্খলায় আনার।
সরকারি নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এআই-এর অপপ্রয়োগ রোধ করা সম্ভব নয়।